পর্যায় সারণি বিভিন্ন রসায়নবিদের নিরলস প্রচেষ্টায় পড়া রসায়নের জগতে এক অসামান্য অবদান। রসায়ন অধ্যয়ন, নতুন মৌল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী, গবেষণা ইত্যাদিতে পর্যায় সারণি বিরাট ভূমিকা পালন করে। নিচে তার কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হলো:
(a) রসায়ন পাঠ সহজীকরণ: 2016 সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে 118টি মৌল আবিষ্কার করা হয়েছে। আমরা যদি শুধু এটি ভৌত ধর্ম, যেমন গলনাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক, ঘনত্ব ও কঠিন/তরল/গ্যাসীয় অবস্থা এবং এটি রাসায়নিক ধর্ম, যেমন- অক্সিজেন, পানি, এসিড ও ক্ষারের সাথে বিক্রিয়া বিবেচনা করি তাহলে 118টি মৌলের মোট 118 × (4 + 4) - 944টি ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। এতগুলো ধর্ম মনে রাখা অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু পর্যায় সারণি সে কাজটিকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। এ পর্যায় সারণিতে রয়েছে আঠারোটি গ্রুপ আর সাতটি পর্যায়। প্রতিটি গ্রুপের সাধারণ ধর্ম জানলে 118টি মৌলের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম সম্বন্ধে একটি মোটামুটি ধারণা লাভ করা যায়। শুধু তাই নয়, পর্যায় সারণি সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা থাকলে বিভিন্ন মৌল দ্বারা গঠিত তাদের যৌগের ধর্ম সম্পর্কেও ধারণা লাভ করা যেতে পারে।
(b) নতুন মৌলের আবিষ্কার: কিছু দিন আগেও সাতটি পর্যায় আর আঠারোটি গ্রুপ নিয়ে গঠিত পর্যায় সারণিতে বেশ কিছু ফাঁকা ঘর ছিল। এই মৌলগুলো আবিষ্কার হবার আগেই ঐ ফাঁকা ঘরে যে মৌলগুলো বসবে বা তাদের ধর্ম কেমন হবে তা পর্যায় সারণি থেকে ধারণা পাওয়া গিয়েছিল। তোমরা ইতোমধ্যে জেনে গেছ যে বিজ্ঞানী মেন্ডেলিফ তাঁর সময়ে আবিষ্কৃত 63টি মৌলকে তার আবিষ্কৃত পর্যায় সারণিতে স্থান দিতে গিয়ে যে মৌলগুলো সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন সেগুলো পরে আবিষ্কৃত হয়েছিল।
(c) গবেষণা ক্ষেত্রে: গবেষণার ক্ষেত্রেও পর্যায় সারণির অসামান্য অবদান রয়েছে। মনে করো, কোনো একজন বিজ্ঞানী কোনো একটি বিশেষ প্রয়োজনের জন্য নতুন একটি পদার্থ আবিষ্কার করতে চাইছেন। তাহলে আগেই তাঁকে ধারণা করতে হবে যে, নতুন পদার্থটির ধর্ম কেমন হবে এবং সেই সকল ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ তৈরি করতে কী ধরনের মৌল প্রয়োজন হবে। তার এ ধারণা পর্যায় সারণি থেকেই পাওয়া যাবে।
এছাড়া পর্যায় সারণির আরও অনেক ধরনের ব্যবহার আছে যা তোমরা ধীরে ধীরে জানতে পারবে।
আরও দেখুন...